সারাদেশ

কুড়িগ্রামে সামর্থ্যবানদের পেটে বানভাসিদের ত্রাণ

প্রভাত আলো   কুড়িগ্রাম

১২ জুলাই ২০২৪


কুড়িগ্রামে সামর্থ্যবানদের পেটে বানভাসিদের ত্রাণ
কুড়িগ্রামে সামর্থ্যবানদের পেটে বানভাসিদের ত্রাণ | ছবি: Sayeduzzaman Shad (Editor)

কুড়িগ্রাম সদরের বেলগাছা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা হায়দার আলী। পাকা রাস্তার সঙ্গে আধা পাকা কয়েকটি ঘর নিয়ে বাড়ি। বড় ছেলে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত। ছোট ছেলে সেনাবাহিনীর সদস্য। স্বাবলম্বী পরিবারের অভিভাবক হায়দার আলী বন্যাদুর্গতদের জন্য বরাদ্দকৃত ত্রাণ সহায়তা পেয়েছেন। ইউনিয়নের ‘বন্যাকবলিত পরিবারের অগ্রাধিকার তালিকায়’ তাঁর নাম ১৫৪ নম্বরে। একই ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাকের দুই ছেলে দূরপাল্লার গাড়িচালক। কয়েক শতক জমির ওপর উঁচু ভিটায় আধা পাকা ঘর। সামর্থ্যবান এই পরিবারের বাবা ও দুই ছেলে ত্রাণ সহায়তা পেয়েছেন। তালিকায় তাঁদের নাম ১২১, ১২২ ও ১২৩ নম্বরে। একই গ্রামের বাসিন্দা শ্রমিক সরদার নুর আমিন। গত বছর গ্রামের ভেতরে পাকা সড়কের সঙ্গে প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে জমি কিনেছেন। সেই জমিতে সবজি চাষ করেছেন। বাড়িতে টিনের ঘর। বন্যা কিংবা জলাবদ্ধতার কোনো ছাপ নেই। তালিকার ৯০ নম্বরে আছে তাঁর নাম। এই ইউনিয়নে বন্যাকবলিতদের তালিকায় ঠাঁই পেয়েছেন এ রকম অনেক সামর্থ্যবান ব্যক্তি। চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, বাড়িতে পাকা ঘর থাকা এমন পরিবারের সদস্যরা পেয়েছেন বানভাসিদের জন্য বরাদ্দের খাদ্য সহায়তা। অথচ ইউনিয়নটি বন্যাকবলিতই নয়। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) কুড়িগ্রামের ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্পের উপসহকারী প্রকৌশলীর গাড়িচালক মো. মুকুল। ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা এই গাড়িচালকও পেয়েছেন ত্রাণ। এ ইউনিয়নে বন্যার কোনো চিহ্নই নেই। নেই অদূরে কোনো নদ-নদীও। জেলা ছোট কিংবা বড় যে ধরনের বন্যায় আক্রান্ত হোক না কেন, এই ইউনিয়ন থাকে সব সময় নিরাপদ। এমনকি ২০১৭ সালে ধরলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে জেলা সদরের যে কয়েকটি ইউনিয়ন অস্বাভাবিক বন্যার কবলে পড়েছিল, তাতেও এই ইউনিয়ন ছিল নিরাপদ। অথচ বন্যাকবলিত পরিবারের অগ্রাধিকার তালিকায় এই ইউনিয়নের ১৮০ পরিবারকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তালিকায় থাকা এই ইউনিয়নের বেশির ভাগ পরিবার স্বাবলম্বী ও সামর্থ্যবান। তাঁদের কোন বিবেচনায় বন্যাকবলিতদের জন্য বরাদ্দের ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তালিকার ১০০ নম্বরে রয়েছেন আব্দুর রহিম নামের এক ব্যক্তি। ত্রিমোহিনী বাজারসংলগ্ন মসজিদের ঠিক উত্তরে কুড়িগ্রাম-রাজারহাট সড়কের সঙ্গে তাঁর বাড়ি। বাড়ির সামনে ৪-৫টি দোকানঘর ভাড়া দেওয়া। আধা পাকা ঘরের বাড়ি লাগোয়া কয়েক কোটি টাকা মূল্যের এক একরের বেশি সম্পত্তি রহিমের। অথচ তিনিও ‘বন্যাকবলিত’! বেলগাছা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল আজিজ ব্যাপারী বলেন, ইউনিয়নে যেসব পরিবারে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে, তাদের প্রায় সবাই সচ্ছল ও কর্মক্ষম। অনেক অসচ্ছল ও দুস্থ পরিবার বঞ্চিত হয়েছে। উপজেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, বেলগাছা ইউনিয়নে ১ টন চাল ও ৮০ প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চত্বর থেকে এসব বিতরণ করা হয়। ইউপি চেয়ারম্যান লিটন মিয়া বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে বন্যা নেই। তবে ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে যাওয়া একটি নালার পাশে বসবাসকারী কিছু পরিবারে জলাবদ্ধতা রয়েছে। তবে সে সংখ্যা কম। একইভাবে কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত না হলেও সেখানেও এই সহায়তা দেওয়া হয়েছে।’ তালিকায় সামর্থ্যবানদের নামের প্রশ্নে চেয়ারম্যান লিটন মিয়া বলেন, ‘তালিকা উপজেলা পরিষদ থেকে করেছে। আমি শুধু বিতরণকারী।’ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুসফিকুল আলম হালিম বলেন, ‘অতিবৃষ্টিতে জলাবদ্ধ দিনমজুর পরিবারের কথা বিবেচনায় নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানের পরামর্শে বেলগাছা ইউনিয়নে এক দফা এক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তালিকায় সামর্থ্যবান পরিবারের সদস্যদের নাম থাকার বিষয়টি আমার জানা নেই।’

114