নবীগঞ্জ প্রতিনিধিঃ নবীগঞ্জ উপজেলার ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের ঘোলডুবা গ্রামের মৃত আতর আলীর পুত্র সোহেল মিয়া আবারো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এবার ফাঁদে ফেলেছে তারই আপন চাচী যুক্তরাজ্য প্রবাসী কিডনী রোগে অসুস্থ্য নাজমা খানমকে। এ নিয়ে নবীগঞ্জ থানায় অভিযোগের পর সোহেল বিভিন্ন চল চাতুরীর আশ্রয় নিয়েছে।
অভিযোগ ও নাজমা খানমের পারিবারিক সূত্রে জানাযায়, নাজমা খানমের স্বামী ঘোলডুবা গ্রামের ইন্তাজ উল্লাহর পুত্র যুক্তরাজ্য প্রবাসী মকদ্দুছ মিয়া ২০২০ সালের ৫ সেপ্টেম্বর মারা যান। তিনি মারা যাবার পর তার স্ত্রী কিডনী রোগে আক্রান্ত নাজমা খানম স্বামীর ক্রয়কৃত নবীগঞ্জ শহরের ওসমানী রোডে ১৩.৬২ শতক ভূমি তার চিকিৎসার কাজে ব্যয়ের জন্য তাদেরই গ্রামের সাবেক মেম্বার মৃত উরুপ মিয়ার পুত্র লন্ডন প্রবাসী আল হেলালের নিকট ৪০ লক্ষ টাকায় বিক্রি সাব্যস্ত করেন এবং নগদ ১০ লক্ষ টাকা গ্রহন করে তিনি ওই জায়গার বিপরীতে একটি লিখিত চুক্তি করেন। চুক্তিপত্রে সোহেলের আপন ভাই শিবলু মিয়া ও ফুফাতো ভাই জামাল উদ্দিন স্বাক্ষী হিসেবে স্বাক্ষর করেছেন। পরে ওই জায়গা দীর্ঘ ১২ বছর ধরে দায়িত্বে থাকা তার কেয়ার টেকার কুর্শি ইউনিয়নের এনাতাবাদ গ্রামের রুকু মিয়া ক্রেতা আল হেলালের ভাগনা রাজিবের কাছে দখল সমজিয়ে দেন। রাজিব দখল বুঝে দোকান ঘরে তালা লাগিয়ে তার বাসায় চলে যান। এ খবর জানতে পেরে বহুরূপী সোহেল শহরতলীর কিছু কুচক্রী মহলের সহযোগিতায় ওই জায়গার সামনের দোকান ঘরের তালা ভেঙে দোকান ঘর দখল করে নেয়। এ নিয়ে আল হেলালের ভাগনা রাজিব সোহেলের বিরুদ্ধে নবীগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ সোহেলকে কয়েক দফা থানায় আসার জন্য খবর দিলেও সে আসেনি। পরবর্তীতে নবীগঞ্জ থানার ওসি মোঃ আজিজুর রহমান তাকে ফোন দিলে গত শুক্রবার সে নবীগঞ্জ থানায় হাজির হয়। এ সময় সুহেল তার পক্ষে জায়গার কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। ওই সময় সোহেল ওসিকে জানায় ওই জায়গা ২০০৮ইং সালে তার চাচা মকদ্দুছ মিয়া তাকে রেজিষ্ট্রি দানপত্র দলিল করে দিয়ে গেছেন। এ সময় ওসির কক্ষে উপস্থিত ছিলেন নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল হক চৌধুরী সেলিম, নবীগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন মিঠুসহ ঘোলডুবা গ্রামের বিশিষ্ট মুরব্বীয়ান।
এক পর্যায়ে ওসি তাকে কাগজ দেখাতে বললে সে জানায়, কাগজ আদালতে জমা আছে। বৃহস্পতিবার কাগজ দেখাবে। পরবর্তীতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আবারো ওসির কক্ষে উভয় পক্ষকে নিয়ে বসেন ওসি আজিজুর রহমান। এ সময় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল হক চৌধুরী সেলিমও উপস্থিত ছিলেন। ওই দিনও রেজিষ্ট্রি দানপত্র দলিল দেখাতে পারেনি সোহেল।
থানা থেকে চলে যাওয়ার পর ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারী আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন সোহেল। মামলায় তিনি উল্লেখ করেন ওই জায়গা তার চাচা তাকে মৌখিকভাবে দান করে গেছেন।
এদিকে তার চাচী নাজমা খানম জানান, তার ভাসুরের ছেলে সোহেল তার কাছে ১০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করেছে। তাহলে সে জায়গা ছেড়ে দেবে। এবিষয় নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে ঘর জ্বলিয়ে দেয়ার হুমকি দেয় সোহেল।
উল্লেখ্য, উল্লেখিত সোহেল মিয়ার বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে একাধিক ব্যক্তির সাথে প্রতারনার অভিযোগ রয়েছে। ২০১৫ ইং সালের ৯মে শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও আওয়ামীলীগ নেতা মোতাহির মিয়ার কাছে ১৯ শতক জায়গা বিক্রি করে সোহেল। ১০ মে মোতাহির মিয়া এক্সিম ব্যাংক নবীগঞ্জ শাখার তার নিজ একাউন্ট থেকে ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা উত্তোলন করে সোহেলকে বুঝিয়ে দেন। ১১ মে মোতাহির মিয়া মারা গেলে প্রতারক সোহেল মোতাহির মিয়ার পরিবারের কাছে ওই টাকা দাবি করে। মোতাহির মিয়ার দোকানের কর্মচারীদের বিষয়টি জানা থাকায় তারা ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল জাহান চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করলে ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে সোহেলের প্রতারণার বিষয়টি ধরা পড়লে সোহেলকে থানায় সোপর্দ করা হয়। এ ঘটনায় সে মৃত মোতাহির মিয়ার পরিবারের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা ও ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ করবে মর্মে মুচলেখা দিলে মুক্তি পায়। এছাড়া সে ঘোলডুবা গ্রামের বর্তমান মেম্বার ফারছু মিয়ার বোনের কাবিনের জায়গা নিয়ে জালিয়াতি, নহরপুর গ্রামে কবরস্থানের জায়গা নিয়ে প্রতারণাসহ তার বিরুদ্ধে এন্তার অভিযোগ রয়েছে।
সোহেলের এহেন কর্মকান্ডে চরম বিপাকে পড়েছেন লন্ডন প্রবাসী অসুস্থ্য নাজমা খানম। তিনি এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহযোগিতা চেয়েছেন।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত সোহেল মিয়ার সাথে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।