স্টাফ রিপোর্টারঃ প্রায় তিন লক্ষ মানুষের বসবাস জকিগঞ্জ উপজেলায়। সীমান্তবর্তী এ জনপদে কিছু হতাশার গল্প আমাদের ভীষণরকম পীড়া দেয়। আজ চেষ্টা করবো জকিগঞ্জের চিকিৎসা নিয়ে কিছু সুখ-দুঃখের কথা লিখার।
বাড়ির পাশেই ৫০শয্যার আধুনিক সরকারী সদর হাসপাতাল। মাঝে-মধ্যে যাওয়া হয়েছে চিকিৎসার জন্য বা পরিচিত কোন অসুস্থ রোগী দেখার জন্য। নিজের বেলায় দুইবার সুচিকিৎসা পেয়েছি প্রায় দেড় যুগ আগে, অকুণ্ঠচিত্তে কৃতজ্ঞতা জানাই। একটি আধুনিক চিকিৎসালয় ভুক্তভোগী মানুষের আস্থা ও ভরসার প্রতীক হয়ে উঠে। জকিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে রোগীদের উপচে পড়া ভিড় থাকায় স্থান সংকুলানে যেমন হিমশিম খাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ তেমনি সুচিকিৎসা নিশ্চিতের বিষয়টিও অনিশ্চিত থেকে যাচ্ছে।
সময় কিংবা স্থানের সংকুলানে দেরী হলে প্রায় সময়ই মেজেতে, বারান্দায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা রোগীদের পড়ে থাকার দৃশ্য অচেনা নয়। পুরাতন আর জরাজীর্ণ বিল্ডিংয়ে ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসা দিচ্ছেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা অথচ পাশেই রয়েছে প্রায় এক যুগ আগে নির্মিত ৫০শয্যা বিশিষ্ট আধুনিক বিল্ডিং। কিন্তু কি কারণে তা আজও উদ্বোধন হয়নি, অদৃশ্য কর্তৃপক্ষের কাছেই এই উত্তর।
আরো পড়ুনঃ মাদারীপুরে গৃহবধুকে ধর্ষনের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
হাসপাতালের রুগ্ন বিল্ডিংয়ে রোগীদের সুচিকিৎসা প্রদানে যেমন বিঘ্ন ঘটছে, তেমনি ভূমিকম্প বা যে কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগে মুহূর্তেই জীবননাশের আতঙ্ক বয়ে বেড়াতে হচ্ছে।
বিল্ডিংয়ের কোনায় কোনায় ময়লা আবর্জনা, উচ্ছিষ্টাংশ আর পানের পিক এ যেন আরেক চোখধাঁধানো দৃশ্য। চিকিৎসা দাতা হোক চিকিৎসা গ্রহীতা হোক অরুচিকর এই দৃশ্য উভয়ের মগজে প্রভাব ফেলবে তা নিঃসংকোচে বলা যায়।
এদিকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের আত্মীয় স্বজনের উপচে পড়া ভীড় দেখে বুঝার উপায় নেই এটা হাসপাতাল নাকি কোন সুপার সপ না দর্শনীয় স্থান? স্বাস্থ্যবিধির প্রশ্ন তো সেখানে অপ্রাসঙ্গিক বটে, হাঁচি-কাশি বাজছে অবিরাম।
হাসপাতালের ইমার্জেন্সী বিভাগের অবস্থা বড্ড করুন। এখানে কর্তব্যরত ডাক্তার কে, আর সাধারণ মানুষ কে বুঝার উপায় নেই। আজ যখন হাসপাতালে গেলাম ইমার্জেন্সীতে কাউকে দেখতে পাইনি। একটু পর একজনকে রুমে ঢুকতে দেখে জিজ্ঞেস করলে জানালেন তিনিই ডিউটিরত, কিন্তু তিনি নিজের পরিচয় দিতে অপারগতা প্রকাশ করলেন। উনার পরনে ডাক্তারের/স্টাফের নির্দিষ্ট ইউনিফর্মও নেই এমনকি মাস্ক ছাড়াই তাকে দেখা যায় দায়িত্ব পালন করতে। বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা একজন রোগী খানিক পরে আসেন প্রেসার মাপাতে। কিন্তু তথাকথিত ডিউটিরত চিকিৎসক অপারগতা প্রকাশ করেন! জিজ্ঞেস করলে জানালেন কর্তৃপক্ষের নিয়মানুযায়ী প্রেশার মাপা যাবেনা। তখন তাকে জিজ্ঞেস করলাম, কে সেই কর্তৃপক্ষ? তার উত্তর ছিলো ‘উপরের স্যার’।
উপরের স্যারের পরিচয় জানতে চাইলে উনি আমতা আমতা করে ডা. আব্দুল্লাহ আল মেহেদীর কথা বললেন। সাথে সাথে ডা.আব্দুল্লাহ আল মেহেদীকে ফোনে কল দিলে- তিনি এমন কথা কে বলেছে, জানতে চেয়ে কর্তৃপক্ষের এমন নির্দেশের প্রশ্নই উঠে না জানান।
হাসপাতালের এমন রুগ্ন চেহারা দেখে বড় দুঃখ হয়, কষ্ট হয় আবার মায়াও হয়। ইচ্ছে করে দুইটা স্যালাইন পুশ করে দিয়ে আসি হাসপাতালের দেয়ালে।
হ্যালো জনপ্রতিনিধি! তিন লাখ মানুষের আকাঙ্ক্ষা, দুর্ভোগ, সমস্যা আর বোবাকান্না আপনার কান পর্যন্ত পৌঁছায় ❓