কানাইঘাট প্রতিনিধি: কানাইঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে বিভিন্ন খাতে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে সিলেট সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তিন সদস্যের একটি তদন্ত দল। গতকাল রবিবার দুপুর ১২টা হতে তারা কানাইঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপস্থিত হয়ে তদন্ত কাজ শুরু করেন। তদন্তকালের অভিযোগের বাদী, বিবাদী ও স্বাক্ষীগণের মৌখিক ও লিখিত সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। জানা যায় আগমী ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সিলেট সিভিল সার্জনকে নির্দেশ দিয়েছেন সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডাঃ সুলতানা রাজিয়া। উল্লেখ্য কানাইঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিভিন্ন খাতের লক্ষ লক্ষ টাকা ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে আত্মসাত করার দায়ে সদ্য বিদায়ী টিএইচও ডাঃ শরফ উদ্দিন নাহিদ ও অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর শামীম আহমদের বিরুদ্ধে কানাইঘাট বাজারের নাঈম এন্ড ফাহিম রেষ্টুরেন্টের সত্বাধিকারী আব্দুল মান্নান গত ২ ডিসেম্বর সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডাঃ সুলতানা রাজিয়া বরাবরে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি সিলেট সিভিল সার্জন বরাবরে নির্দেশনা দিয়েছেন।
তার এ নির্দেশনায় জানা যায় কানাইঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পঃপঃ কর্মকর্তা ডাঃ শরফ উদ্দিন নাহিদ ও অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর শামীম আহদের পরস্পর যোগসাজশে করোনা কালীন সময়ে নাঈম এন্ড ফাহিম রেষ্টুরেন্ট ও অন্য প্রতিষ্টান সহ কিছু ব্যাক্তির নামে ভুয়া বিল ভাউচার তৈরী করে সরকারী খাতের লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাত করা হয়েছে মর্মে যে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে তা আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আরো উল্লেখ্য যে, গত মার্চ মাসে বৈশি^ক মহামারী কোভিড-১৯ এর সময় কানাইঘাট বাজারের নাঈম এন্ড ফাহিম রেস্টুরেন্টটি বন্ধ থাকা অবস্থায় টিএইচও ডাঃ শরফ উদ্দিন নাহিদ ও কাম-কম্পিউটার অপারেটর শামীম আহমদ স্বাক্ষরিত ২টি পৃথক পৃথক ভাউচার তৈরি করে ১ লক্ষ ৫৫ হাজার ৫ শ’ টাকা বিল উত্তোলন করা হয়। এমন সংবাদ শুনে আব্দুল মন্নান কানাইঘাট ট্রেজারী অফিস থেকে পৃথক দু’টি ভাউচার উত্তোলন করেন। সেখানে তিনি দেখতে পান তার রেস্টুরেন্টের ভাউচার দিয়ে যে বিল উত্তোলন করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভূয়া। এমনকি ঐ ভূয়া বিল ভাউচারে যে সীল ও স্বাক্ষর ব্যবহার করা হয়েছে তা জালিয়াতী করা হয়েছে। এতে আব্দুল মন্নানের প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে।
আরো পড়ুন যুক্তরাষ্ট্রে পারিবারিক ভিসা চালুর দাবি, বাইডেনকে অভিনন্দন জানিয়ে সিলেটে শোভাযাত্রা
এমন অভিযোগ এনে তিনি মূলত ডাঃ শরফ উদ্দিন নাহিদ ও শামীম আহমদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ দায়ের করেছেন। এছাড়াও ২০১৯-২০ অর্থ বছরে এ ভাউচার দু’টি ব্যাতীত আরো অনেক ভূয়া ভাউচার তৈরি করে তারা কয়েক লক্ষ টাকা আত্মসাত করেছেন। একই ভাবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাদির ভেরাইটিজ ষ্টোরের নামে ভূয়া ভাউচার স্টেশনারী মালামাল ক্রয় বাবদ দেখিয়ে আরো প্রায় ১ লক্ষ ২২ হাজার ৮৬৪ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত করেন। এছাড়া বিভিন্ন ভূয়া শ্রমিক পরিচয়ে পৃথক পৃথক বিল-ভাউচার তৈরি করে লক্ষাধিক টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। ভাউচারে যাদেরকে শ্রমিক হিসেবে ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে সেইসব ঠিকানায় কোন শ্রমিকের সন্ধান পাওয়া যায়নি। এমতাবস্থায় ডাঃ শরফ উদ্দিন নাহিদ ও শামীম আহমদের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহ বিভিন্ন দফতরে বেশ কয়েকটি অভিযোগ দায়ের করা হলেও অদ্যবধি পর্যন্ত রহস্য জনক ভাবে তাদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনা প্রকাশের পর কেবল মাত্র ডাঃ শেখ শরফ উদ্দিন নাহিদ অন্যত্র বদলী হয়েছেন, কিন্তু শামীম আহমদ এখনো স্বপদে বহাল থেকে আধিপত্য বিস্তার করছেন বলে জানিয়েছেন এলাকার লোকজন। তারা অবিলম্বে বিষয়টি সঠিক তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবী জানিয়েছেন।