নেত্রকোণা ( ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি: নেত্রকোণা পৌরশহরের কুরপাড় বলাই নগুয়ার ষোড়শীকে অপহরণের পর আটক রেখে ধর্ষণ করার অভিযোগে আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে। ১৬ নভেম্বর নেত্রকোণা আদালতে ষোড়শীর ভাই আরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে একই এলাকার গণমাধ্যমকর্মী সুলতান আহমেদের বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করেন। হয়রানিমূলক এই মামলা দায়ের করায় ১৪ বছর আগে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া এক দম্পতি এখন ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
প্রতিনিয়ত প্রাণ নাশের হুমকিতে তাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনকে করে তুলছে দুর্বিষহ। হুমকীর মূখে রয়েছে সুলতান আহমেদের পরিবারের সদস্যরা। সূত্র জানায়, ২০০৬ সালের ২৭ ডিসেম্বর পরস্পরের সম্মতিতে নেত্রকোণা পৌরশহরের কুরপাড় বলাই নগুয়া মহল্লার ইস্কান্দর মিয়ার কন্যা রাজিয়া সুলতানার সাথে একই এলাকার গণমাধ্যমকর্মী সুলতান আহমেদের বিয়ে হয়। কি এই বিয়ে মেনে না নিয়ে নানা ছলচাতুরি, প্রতারণা, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে দু’জনকে বিচ্ছিন্য করার চেষ্টা করে এবং এক পর্যায়ে রাজিয়া সুলতানাকে জোর করে অন্যত্র বিয়ে দেন বাবা ইস্কান্দর মিয়া। ইচ্ছার বিরুদ্ধে সম্পন্ন এই বিয়ে মেনে না নিয়ে রাজিয়া সুলতানকে খুঁজে বের করে আবারো বিধিসম্মতভাবে বৈবাহিক জীবন শুরু করে। কিন্তু আবারো বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় রাজিয়ার পরিবার। এবারো বিয়ে মেনে না নিয়ে হয়রানি ও চক্রান্তের পথ বেছে নেয় তারা। প্রথমে তারা জেলা ডিবি কার্যালয়ে ধর্ষণ ও অপহরণের অভিযোগ করে। ডিবি কর্মকর্তা দু’জনকে ডেকে নিয়ে বিষয়টি অবহিত হবার পর নির্দোষ ঘোষণা করে তাদের ছেড়ে দেন। কিন্তু রাজিয়ার পরিবার এ সিদ্ধান্ত অগ্রাহ্য করে। তারা রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাব খাটিয়ে সুলতান ও রাজিয়াকে হয়রানির শিকার করতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল আদালতে অপহরণ ও ধর্ষণের মামলা দায়ের করে। এঘটনায় বুধবার (৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর মুগদা থানায় ভুক্তভোগী রাজিয়া সুলতানা নিজেই তার নিরাপত্তা চেয়ে জিডি রুজু করেছেন। মামলা নং ৫০৯,তাং ৯/১২/২০২০।
বিষয়টি নিস্পত্তির জন্য পুলিশের আইজি, স্বরাষ্ট্র সচিব, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগী এই দম্পত্তি। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ ফেইসবুকে, গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে ভিডিও এবং প্রেস রিলিজ পাঠিয়ে এসব হয়রানী থেকে মুক্তির দাবী জানায় রাজিয়া। রাজিয়া বলেন,২০০৬ সালে ২৭ ডিসেম্বর মোঃ সুলতান এর সাথে একে অপরকে পছন্দ করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই। কিন্তু আমার বাবা, আমার ভাই ও পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি সহজভাবে মেনে নেয়নি। বিয়ের পরপরই বিভিন্ন কূটকৈাশলে তারা আমাদেরকে আলাদা করে ফেলতে চায়। একদিন মদনপুর আত্মীয় বাড়িতে বেড়াতে গেলে আমার পরিবারের সদস্যরা মদনপুর থেকে মাইক্রোবাসযোগে দুজনকে আলাদা আলাদা গাড়িতে বিবাহ মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাসায় নিয়ে যায়। তারপর আমাকে বিভিন্ন রকম শারিরিক ও মানসিক টর্চার করতে থাকে তারা।
একই সাথে আমার স্বামী সুলতান আহমেদকে মেরে ফেলার হুমকি দিতে থাকে। তারা আমাকে বলে আমি যদি তাকে ডিভোর্স না দেই তাহলে কিডন্যাপের মিথ্যা মামলা দিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দিবে আমার স্বামীকে। আমার ও আমার স্বামীর নিরাপত্তার কথা,মানসিক ও শারিরিক টর্চারে আমি ডিভোর্স দিতে বাধ্য হই। ওই সময় আমি ৭ মাসের অন্তসত্ত্বা ছিলাম। বিষয়টি জানার পরিবারের লোকজন জোরপূর্বক আমার পেটের বাচ্চাটা ইচ্ছের বিরুদ্ধে নষ্ট করে দেয়। স্বামী ও সন্তানকে হারিয়ে আমি তখন পুরোপুরি মানসিক ও শারীরিকভাবে অসু¯’ হয়ে পড়ি। এ অবস্থা থেকে সুস্থ্য হতে আমার অনেক সময় লাগে যায়। এরই মাঝে জোর পূর্র্বক আমাকে অন্যত্র বিয়ে দেয়।
তখনও আমি পুরোপুরি সুস্থ্য ছিলাম না। এ অবস্থায় আমার স্বামী সুলতানকে খোঁজ করেছিলাম। এক পর্যায়ে তার সাথে আমার যোগাযোগ হয়। কিন্তু সে আমাকে চেনার পর কথা বলতে রাজি হয় না। অনেক কান্নাকাটি করার পর তার ও আমার ভুল বোঝাবুঝি অবসান ঘটে। এক পর্যায়ে আমারা সিদ্ধান্ত নেই একে অপরকে বিয়ে করার। এবং ওই স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে আমার প্রথম স্বামী সুলতানকে বিয়ে করে সুলতানের কাছে চলে যাই। এ অবস্থায় আমার ভাই স্বামীর বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অপহরণের অভিযোগ করে। সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমার স্বামীকে নেত্রকোণা এসপি অফিসে নিয়ে আসে। তখন আমি সেখানে যাই এবং লিখিতভাবে বলে আসি আমরা স্বইচ্ছায় একে-অপরকে বিয়ে করেছি।
আরো পড়ুন প্রেমের নামে শিক্ষিকাকে ধর্ষণ, বিয়ের ভয়ে পালিয়েছেন শিক্ষক
তাকে এসপি অফিস থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসি। তারপর আমাদের মতো আমরা বসবাস করতে থাকি। এদিকে আমার বাবা, ভাই ও পরিবার আমার স্বামীকে হুমকি দিতে থাকে পূর্বের ন্যায়। তাকে যেখানে পাবে মারধর করবে এবং পুলিশ দিয়ে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে, ধরে নিয়ে যাবে এবং জেল খাটাবে। সে ভয়ে আমরা স্বামী-স্ত্রী নেত্রকোণা ছেড়ে চলে যাই অন্যত্রে। আমার ভাই এখানেই থেমে থাকেনি। আমার স্বামী সুলতানের বিরুদ্ধে ধর্ষন ও অপহরণ মামলা করে যার কোনো ভিত্তি নাই। সঙ্গে আমার স্বামীর পরিবারের ওপর বিভিন্ন রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবে হয়রানি করছে। অপহরন ও ধর্ষন নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে স্বামীকে জেল দিয়ে আমাকে আবারো আলাদা করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে আমার বাবা ও ভাই। এ অবস্থায় সামাজিক যোগাযোগ ফেইসবুকে, গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে ভিডিও বার্তা ও প্রেস রিলিজ পাঠিয়ে এসব হয়রানী থেকে মুক্তির দাবীসহ বিষয়টি নিস্পত্তির জন্য পুলিশের আইজি, স্বরাষ্ট্র সচিব, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগী এই দম্পত্তি।